রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার জাহাজে তুলে দিলেও কমছে না দেশের রপ্তানি পণ্যের জট। বরং চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। আর বাড়তি কনটেইনারের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত রপ্তানিকারকেরা যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে আগেভাগেই রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে চট্টগ্রামের ২২টি ডিপোতে তৈরি হয়েছে রপ্তানি পণ্যের জট। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রমুখী ওই রপ্তানি পণ্যের চাপ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করার পরই পণ্য নিতে তৎপর হয়ে পড়ে দেশটির ক্রেতারা। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের তারা ১ আগস্টের আগেই পণ্য জাহাজীকরণের জন্য চাপ দেন। আর ওই কারণে নির্ধারিত সময়ের এক-দুই সপ্তাহ আগেই রপ্তানিকারকেরা ডিপোতে পণ্য পাঠাতে শুরু করেন। ফলে ডিপোগুলোতে বাড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী পণ্য রপ্তানির চাপ। রপ্তানিকারক এবং চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্যের ৯৯ শতাংশই সমুদ্রপথে রপ্তানি হয়। সেজন্য রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে প্রথমে সরাসরি চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলোতে নেয়া হয়। তারপর ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তোলা হয়। মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এভাবে রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সাধারণত ডিপোগুলো থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কনটেইনার রপ্তানি হয়। তবে গত জুলাই মাসে চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপোগুলোতে ৯৯ হাজার কনটেইনার রপ্তানির জন্য প্রস্তত করা হয়েছিল। কিন্তু রপ্তানি হয়েছে ৮১ হাজার কনটেইনার। বাকি ১৮ হাজার কনটেইনার রপ্তানি করা যায়নি। সেগুলো এখন প্রতিদিন বন্দরে পাঠিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ১ আগস্টের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পণ্য রপ্তানির চাপ দিয়েছিলো। যাতে ওসব চালানে পাল্টা শুল্ক দিতে না হয়। আর সেজন্যই রপ্তানিকারকরাও নির্ধারিত সময়ের আগে পণ্য ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্দরে জাহাজজটের কারণে বাড়তি কনটেইনারের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। আবার জেটিতে অবস্থানরত বেশির ভাগ জাহাজ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। ফলে রপ্তানি করা যাচ্ছে না সক্ষমতার বেশি কনটেইনার। বর্তমানে জেনারেল কার্গো বার্থ ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে অবস্থানরত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে তিন থেকে চার দিন সময় লাগছে। শুধু নিউমুরিং টার্মিনালে অবস্থানরত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে গড়ে দুই দিন লাগছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ থেকে গত জুলাই মাসে প্রায় ৩৯৬ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৮০ কোটি ডলার ছিলো যুক্তরাষ্ট্রগামী পোশাকের রপ্তানি মূল্য। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৩ কোটি ডলারে পোশাক রপ্তানি হতো। জুলাইয়ে তা বেশ বেড়ে যায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবর থেকে শুরু হবে অনেক রাজ্যে শীত। শীতের পোশাক রপ্তানি করতে হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠাতে হবে। কার সঙ্গে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের শঙ্কা। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ১ আগস্টের আগে পণ্য রপ্তানির চাপ দিয়েছিলো। আর মার্কিন ক্রেতাদের যাতে ওসব চালানে পাল্টা শুল্ক দিতে না হয়, সেজন্য রপ্তানিকারকেরাও নির্ধারিত সময়ের আগে ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পণ্য। কিন্তু নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য রপ্তানির বাড়তি চাপ তৈরি হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, বাড়তি চাপ তৈরি হলেও ডিপোগুলো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করতে পারছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার কনটেইনারের বেশি চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজে তুলে দেয়া হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ
- আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৩৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৩৩:৪৫ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ